মগবাজারে একটি ভবনে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
রোববার রাতে গঠিত ওই তদন্ত কমিটি সোমবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।”
এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দেবাশীষ বর্ধন জানান। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেইট এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আড়ং, বিশাল সেন্টারসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ ভেঙে পড়ে।
পরে দেখা যায়, আড়ংয়ের উল্টো দিকে আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের তিনতলা ভবনটির প্রায় ধসে পড়ার দশা হয়েছে।
ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে। লোহার গ্রিল, আসবাবপত্র, ভবনের বিভিন্ন অংশ ছিটকে এসেছে রাস্তায়।
সড়কের উপর আটকে থাকা দুটি ক্ষতিগ্রস্ত বাসের ভেতরে যাত্রীদের রক্ত আর জিনসপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়।ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাতজনের মৃত্যুর কথা সাংবাদিকদের জানান।
ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে অন্তত চারশ মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন রাস্তায়; বিস্ফোরণের ধাক্কায় এবং কাচের টুকরো লেগে তারা আহত হন।
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে গ্যাস জমেই ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন। ভবনের যে অংশে শর্মা হাউজ, সে অংশটি তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শর্মা হাউজে গ্যাস সিলিন্ডার ছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছিল। বেঙ্গল মিটেও ব্যবহৃত হত কমপ্রেসার মেশিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। এছাড়া দোতালায় সিঙ্গারের শোরুম ও গোডাউনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়াও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ছিল বিপুল পরিমাণ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসাইন রাতে সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আর ঢাকার পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, এর পেছনে নাশকতার কোনো বিষয় ছিল বলে তিনি মনে করছেন না।
বিস্ফোরণে ক্ষাতিগ্রস্ত ভবনটির আশপাশের ভবন ছাড়াও বিপরীত দিকে রাশমনো হাসনপাতাল, আড়ং, নজরুল শিক্ষালয়, ডম-ইনো ভবন, বিশাল সেন্টারের কোনো কাচ অক্ষত থাকেনি।
ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আফজাল হোসেন বলেন,মগবাজার এলাকা এমনিতেই ব্যস্ত থাকে, সোমবার থেকে লকডাউনের কড়াকড়ি বাড়ার ঘোষণা থাকায় রোববার সন্ধ্যয় ওই রাস্তায় ভিড় ছিল আরও বেশি। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ছিটকে আসা কাচে রাস্তায় থাকা অনেকেই আহত হয়েছেন।